২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী দিবস

শীতের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস সবে মাত্র জমে উঠেছে তখন ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রায় সকল বিভাগেই একযোগে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ফি কয়েক গুণ বাড়িয়ে তা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেয়া হয়। ফলে বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে শুরু হয় ব্যাপক প্রতিবাদী আন্দোলন। প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনে ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী যুক্ত হয়। প্রশাসন এই কোর্স চালুর জন্য গ্রহণযোগ্য যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে হামলা-মামলা করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশ, তৎকালীন প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় ককটেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি চালায়। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী গুরুতরভাবে আহত হন। এছাড়া লাঠি, ইটপাটকেলের আঘাতে আরো শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। প্রক্টরিয়াল বডির টিমও মুখোশ পরে হামলায় অংশ নেন। সেই আন্দোলন সম্ভবত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী সর্ববৃহৎ আন্দোলন।
আন্দোলনের সূত্রপাত ও ঘটনা প্রবাহ
আমরা যখন নিশ্চিত হলাম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স চালু করা হচ্ছে তখন এর বিরুদ্ধে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার ও শপথ নিলাম। পরিচিত শিক্ষার্থী, বন্ধু, শিক্ষকদের সাথে প্রাথমিক আলাপ করলে সকলে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জন্য আন্দোলনের পরিকল্পনার সাথে একমত পোষণ করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা মৌখিক সমর্থন দেন এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমরা আরো সাহসী হয়ে উঠলাম।
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রগতিশীল ছাত্র জোট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১৮ জানুয়ারি তারিখ বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের বিক্ষোভ মিছিল হয়। এবং ওই দিন বিকেলে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে মিটিং করে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৩-২৭ তারিখ প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থাকার কারণে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয় নি। তবে পরীক্ষা চলাকালীন বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের একটা মিছিল হয়। চারুকলার বন্ধুরা ব্যানার লিখতে সাহায্য করে। ২০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ২২ তারিখ সান্ধ্যকোর্স বাতিল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়া হয়। ২২ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী ছাত্র সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।
শিক্ষাকে বিক্রি করে কেন প্রশাসন মুনাফা লাভের জন্য সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করতে যাচ্ছে সেসব বিষয় তুলে ধরে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ১৬ হাজার কপি লিফলেট প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন থেকে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স কেন এবং কিভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণসহ ‘‘ক্যাম্পফায়ার’’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। ‘‘ক্যাম্পফায়ার’’ পত্রিকাটির ৪ হাজার কপি প্রচার করা হয়। প্রচারিত লিফলেট এবং পত্রিকাটির কনটেন্ট বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে।
এরপর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী সকল শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘‘বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’’ নামে একটা ব্যানারে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২৮ জানুয়ারি ‘‘বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’’ ব্যানারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সমানে দাঁড়াই। মুহূর্তের মধ্যে শতশত শিক্ষার্থী সেখানে জড় হয় আমাদের সাথে। জায়গা সংকুলান না হলে আমরা মিছিল বের করি। ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নবীন সংগঠক-বন্ধুদের ব্যানারের সামনে দেয়া হয়। সাংগঠনিক সকল নেতাকর্মী-সদস্যরাই মিছিলের শান্তি-শৃঙ্খলা ও দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন ভবনের সামনে গেলে সেখান থেকে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিলে যুক্ত হয়। ১৫/২০ মিনিটের পর শত শত শিক্ষার্থীর মিছিলটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিলে পরিণত হয়। মিছিলটি পরে পুরাতন ফোকলোর চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রনেতারা উচ্চশিক্ষার দর্শন, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তর আলোচনা তুলে ধরেন। ওই দিন স্বশরীরে উপস্থিত থেকে ছাত্র সমাবেশে সংহতি জানান ৬ জন শিক্ষক। সাংবাদিক এবং আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে মিছিলে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজার অতিক্রম করেছে। সমকাল নাট্যচক্রের সাজু সর্দার রচিত সান্ধ্যকোর্স বিরোধী রম্য গান এবং ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাবেক সম্পাদক ফয়সাল হাবিব রচিত ‘‘ও পণ্ডিত মহাশয় শিক্ষা আর ব্যবসা কি একসাথে হয়....” এই গানটি ব্যাপকভাবে আন্দোলনকারীদের উৎসাহিত করে।
এরপর ২৯, ৩০, ৩১ জানুয়ারি সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়। ভোর থেকেই প্রতিটি ভবনের গেটে তালা লাগানো হয়। প্রতিদিন দফায় দফায় মিছিল সমাবেশ করা হয়। প্রতিদিনই আন্দোলনকারীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। শৃঙ্খলা টিমে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনেককেই যুক্ত করা হয়। পূর্ব পরিচিত এবং বন্ধুবান্ধব, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীদেরকেই এই স্বেচ্ছাসেবী টিমে যুক্ত করা হয়।

৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ভবন ঘেরাও করা হয়। আমাদের প্রতিনিধি দল প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসে কিন্তু প্রশাসন কোনো যুক্তি তর্ক
করতে রাজি না হয়ে জোর করে তাদের সিদ্ধান্ত চালু করার পক্ষে কথা বলে। ফলে বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসে না। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।
৩১ জানুয়ারি ‘‘সাবাস বাংলাদেশ’’ চত্বর থেকে ঘোষণা করা হয় অনির্দিষ্টকারের জন্য ছাত্র ধর্মঘট। নিজের রুমের তালা খুলে এনে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিটি ভবনের গেটে গেটে তালা লাগিয়ে দেন। বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের জমায়েত ও খিপ্রতায় প্রশাসন কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে।
১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করা হয়। সকালে ‘‘সাবাস বাংলাদেশ’’ এর সামনে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশ করা হয়। ওই দিনে তীব্র কুয়াশ এবং শীতকে উপেক্ষা করে সকাল ৭ টা থেকেই হল থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা জমায়েত হতে থাকে। ছাত্রীদের ৫ টি হল এবং ছাত্রদের ১১ টি হল থেকেই পৃথক পৃথকভাবে মিছিল আসে। ওই দিন সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি দেখা যায়। ৪০০/৫০০ ভলানটিয়ার নিয়োজিত থাকে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল থেকেই আন্দোলনকে দমন করার ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সমাবেশ চলতে থাকে। বিভিন্ন বিভাগের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা দেন। সমস্ত ক্যাম্পাস অবরোধ অবরোধ শ্লোগানে মুখরিত হতে থাকে। প্রশাসন বাধ্য হয়ে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়। একটি দাবি আদায় হয়। কিন্তু আমরা বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জোর ঘোষণা দেই এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
হামলার দিন: ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশের নেতৃত্বে নৃশংস হামলা
২ ফেব্রুয়ারি পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও। বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত ঘেরাও চলবে এই দৃঢ়তা নিয়ে আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করছি, মাইকে শ্লোগান চলছে, বক্তব্য চলছে, প্রতিবাদী গান চলছে। এমন সময় হঠাৎ ছাত্রলীগের তৎকালীন পদধারী সকল নেতাকর্মীসহ ৩০০/৪০০ জনের একটা শসস্ত্র একটা গ্রুপ আমাদের সমাবেশস্থলের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে যায়। ৩/৪ মিনিট পর সেই গ্রুপটা ফিরে এসে অতর্কিতে গুলি চালায়। ককটেল ফাটায়। সমাবেশস্থলের পাশে থাকা পুলিশবাহিনীও তখন বারার বুলেট ও ছররা গুলি চালাতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয় অনেক ছাত্র। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র রাজিব খান এখন চোখে মাথায় পায়ে এখন সেই ছররা গুলি বয়ে বেরাচ্ছে। ছত্রভঙ্গ আন্দোলনকারীরা তখন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বিভিন্ন ভবন ও হলে অবস্থান নেয়। খণ্ড খণ্ড মিচিল নিয়ে আবার সংগঠিত হবার চেষ্টা করি। কিন্তু ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা করতে থাকে। পুলিশ-লাঠিচার্জ করতে থাকে। বিকেলের মধ্যেই আবাসিক হল খালি করার ঘোষণা দেয় প্রশাসন।

আন্দোলনকারী সংগঠনসমূহ
তখন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের শরিক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছাত্রনেতা গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মুঈজ।বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি চিলেন সুমন অগাস্টিন সরেন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ছাত্রনেতা ইকবাল কবীর। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ছিলেন ছাত্রনেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বকশী। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছাত্রনেতা সোহরাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ছাত্রনেতা আলমগীর হোসেন সুজন।
কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের শরিক সংগঠনগুলোর মধ্যে গণশিল্পী সংস্থা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন(রুডা), সমকাল নাট্যচক্র, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার (বিথি), সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, স্বনন, তীর্থক নাটক, অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেশন এন্ড কালচার (এস্), অনুশীলন নাট্য দল, অরণী। এছাড়া কার্ল মার্ক্স চর্চা কেন্দ্র, যোগসূত্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (RUPS), সূর্যসারথি (পত্রিকা সংগঠন), বন্ধুসভা, নবজাগরণসহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন মিলে প্রায় ২২ টি সংগঠনের সদস্যরা ‘‘বর্ধিত ফি ও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’’ যুক্ত হয়। আহমেদ নীল, দীপ্ত উদাস, বাবাজী বাউণ্ডুলে সহ তরুণ কবি বন্ধুরাও বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করেন। কর্মচারীবৃন্দও আন্দোলনে সমর্থন জানান। অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসের (প্রয়াত) স্যার সহ প্রায় ১৫/২০ জন শিক্ষক প্রকাশ্যে এবং আরো শতাধিক শিক্ষক অপ্রকাশ্যে সমর্থন জানান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টাস ইউনিটি, প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ, রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকাসমূহ, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও বিভিন্ন টিভি মিডিয়ার রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি, ফটো-সাংবাদিকবৃন্দ আন্দোলনের খবর প্রচার করে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে।
অদ্ভুদ সব মামলা এবং ক্যাম্পা বন্ধ ঘোষণা
৩ ফেব্রুয়ারি মতিহার থানায় আন্দোলনকারীদের নামে মোট ৬ টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশবাদী দুটি, বিশ্ববিদ্যালয়বাদী দুটি, ছাত্রলীগবাদী দুটি। পরে অবশ্য ছাত্রলীগবাদী মামলা তুলে নেয়।
জোর করে ছাত্র-ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেয়। আমরা প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ রাজশাহী নগরে ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করি। এরপর সান্ধ্যকোর্স বাতিল করে ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে রাজশাহী মহানগর, নওগাঁ, বগুড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তৎকালীন সময়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। বন্ধকালীন প্রশাসনের সাথে দুই দফা বৈঠক হয় কিন্তু দাবি মেনে নিতে রাজি না হওয়া বৈঠক থেকে আন্দোলনকারীরা ওয়াক আউট করেন। দীর্ঘ ৪৪ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ রাখে প্রাশাসন। এরপর ক্যাম্পাস খুললে পুণরায় আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু প্রশাসন ও শিক্ষকরা ক্লাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ছাত্রত্ব বাতিল, ফেল করে দেয়াসহ ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক হুমকি দেয়। ফলে আন্দোলনে জমায়েত কমতে থাকে। ব্যাপক দমন পীড়নের কারণে তখন প্রধান একটি দাবি বাস্তবায়ন না হলেও প্রতিটি শিক্ষার্থী প্রতিটি শিক্ষক বুঝেছিলেন যে, বাণিজ্যিক সান্ধকোর্স বাতিলের দাবিটি ছিল সম্পূর্ণ যৌক্তিক। ১৯০৮ সালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের পুলিশবাদী একটি মামলার রায়ে আন্দোলনকারীরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। পুলিশবাদী আরেকটি মামলা চলছে।
সম্প্রতি আচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাবের কারণে সারাদেশের মানুষও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন। কেউই এখন এই বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স চান না। আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও ন্যায্যতার শক্তির কারণেই সেই আন্দোলন কোনো না কোনোভাবে বিজয় অর্জন করবেই। আমরা তখনও মনে করতাম এখনও মনে করি, শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয় টাকা কামানো জায়গা নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই