অবস্থানের ২৭ দিন // নাসির আব্দুল্লাহের সাক্ষাতকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাসির আব্দুল্লাহ্ গত একমাস ধরে সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘসময় তার অবস্থান কর্মসূচীর কারণে শারিরীক ভাবেও বেশ অসুস্থ তবে টলে যায়নি মনোবল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি 'হুল' থেকে তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন জাফর মুহাম্মদ।

জাফর মুহাম্মদঃ আপনার অবস্থান কর্মসূচীর তো ২৭ দিন হয়ে গেল, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

নাসির আব্দুল্লাহঃ আমার কর্মসূচীর আজকে  ২৭ দিন হয়ে গেল, গফত ২৫ তারিখে বিকাল সাড়ে চারটায় আমি আমার অবস্থান কর্মসূচী শুরু করি। এসময় আমি শিক্ষক থেকে শুরু করে শ্রমিক-ছাত্র সহ দুরদূরান্ত থেকে আগত মানুষের সাথে কথা বলেছি,সীমান্তবর্তী মানুষের সাথে কথা বলেছি। সাড়া পাচ্ছি বলতে সবার সাথে কথা হচ্ছে কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হল বিষয়টা মানুষের মধ্যে ট্যাবু হয়ে আছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না,সীমান্ত নিয়ে কথা বলা যাবে না। আমি আসলে ঐ জায়গাটাতেই নক করতে চাচ্ছি, এই ট্যাবুটা ভাঙতে চাচ্ছি। ঐ ভাঙার জায়গাটাতে আশাতীত ভাবে সাড়া পাচ্ছি। 

 জাফর মুহাম্মদঃ সীমান্ত হত্যা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মৃত্য তো একই পররাষ্ট্র নীতির ফল, বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন?

নাসির আব্দুল্লাহঃ  আসলে সীমান্ত হত্যা .................... যখন কোন দেশের ভেতরের অবস্থা খারাপ হয় তখন বিভিন্ন সিনড্রোম প্রকাশ পায়। স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পঞ্চাশ বছরে একটি ছোট রাষ্ট্র হিসেবে যখন তিনপাশে সীমান্ত হল ভারতের তখন ঐ জায়গা থেকে ভারতের সাথে সম্পর্ক কি হবে, বহিঃবিশ্বের সাথে সম্পর্ক কি হবে, ৯০% মুসলমানের দেশ হিসেবে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক কি হবে  সে সম্পর্ক গুলো আমরা আসলে নিরুপন করতে পারি নাই। ফলতঃ ঐ জায়গা থেকেই আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে বিদেশে শ্রমিকরা নিগৃহীত হচ্ছে,নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা কোন নিজস্ব রুট বের করতে পারিনি। যেখানে আমাদের দেশে ৫ লাখের বেশি অবৈধ ভারতীয় বাস করে এবং বাংলাদেশে কাজ করে ইনকাম করে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে 'আকামা' পাচ্ছেনা, থাকার জায়গা পাচ্ছে না এমনও দেখা যাচ্ছে তারা বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন বাজি রাখছে এবং নিজের জীবনটাও অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু আশানুরূপ কিছু পাচ্ছে না। ফলতঃ এই জায়গা থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তা কোন স্পেসিফিক পররাষ্ট্র নীতি কি হবে তার কোন স্পেসিফিক বয়ান নাই যেই বয়ানের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মানুষ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যাবে, বিদেশে যে দূতাবাস গুলো আছে সেখানে যাবে। আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি, বাংলাদেশের যে দূতাবাসগুলো রয়েছে সেই দূতাবাস গুলো এতো দূর্ব্যবহার করে যে আমি আসলে কি একজন বাংলাদেশের নাগরিক সে ব্যপারে তারা সন্দিহান হয়ে যায়। ফলতঃ ঐ জায়গা থেকে সীমান্তে যে হত্যা হচ্ছে সেটা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ব্যর্থতার ফল।বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী যিনি রয়েছেন এ কে আব্দুল মোমেন যিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি আসার পর একটা পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল কিন্তু সে আশাইয় গুড়ে-বালি। ঐ জায়গা থেকেই যতোদিন না আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি ঠিক হবে ততোদিন বাংলাদেশের মেরুদন্ডের কোন অস্তিত্ত্বই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। মানুষ সীমান্তে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে নিগৃহীত হতেই থাকবে।

জাফর মুহাম্মদঃ সীমান্ত হত্যা নিয়ে তো প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলো অনেকদিন থেকেই কথা বলছে, তাদের পক্ষথেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

নাসির আব্দুল্লাহঃ প্রগতিশীল দলগুলো বিভিন্নসময়ে আন্দোলন করে আসতেছে, ফেলানী হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে, সুন্দরবন নিয়ে আন্দোলন করছে কিন্তু ভারত বিষয়ে  তাদের আসলে স্পেসিফিক কোন বয়ান নাই। যদি তারা বয়ান তৈরী করেও কিন্তু তাদের মাঠে ময়দানে তাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না এবং আমি এইখানে বসার পর বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে কথা বলেছি যে আপনাদের স্পেসিফিক প্রতিবাদ জানানো উচিৎ। কিন্তু বামপঅন্থি সংগঠন গুলো , প্রগতিশীল সংগঠনগুলো একের পর এক ইস্যু নিয়ে দৌড়াচ্ছে  স্পেসিফিক ডিপ নলেজ কোথায় আসলে ঢুকবে, আশুবিষয়ে কোন সমস্যার সমাধানে যাবে সে ধরনের কোন পথ নাই।ফলে তারা জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে  এবং এর জন্য তারাই দায়ী। তারা যদি বাংলাদেশের মাটি মানুষকে ধারণ না করতে পারেন এবং তারা যদি কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লেজুড়বৃত্তি করে পলিটিক্স করে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আগামীতে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। সে জায়গা থেকে আমি তাদেরকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে বাংদেশের মাটি-মানুষকে ধারণ করে, বাংলাদেশের পতাকাকে ধারণ করা ,বাংলাদেশের জনগনকে ধারণ করে বাংলাদেশের জনগনের যে সমস্যা গুলো আছে সে বিষয়ে এগিয়ে আসুন।
  
জাফর মুহাম্মদঃ আপনি তো দীর্ঘ সাতাশ দিন ধরে এ জায়গায় অবস্থানে আছেন, আপনার এই  কর্মসূচীকে অনেকেই পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি বলছেন এ ব্যপারে আপনি কি বলবেন?  

নাসির আব্দুল্লাহঃ দেখুন আমি খোলা আকাশের নিচে আজকে সাতাশটা দিন ধরে আছি, এই জায়গায় প্রচন্ড বালি, প্রচন্ড সাউন্ড। যারা পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি বলে আমি তাদেরকে বলব, আপনি একদিন এখানে এসে থেকে যান তাহলে বুঝতে পারবেন কি অবস্থায় আছি। আপনি দূর থেকে কথা না বলে সুন কথা বলি। কথা হোক, আলোচনা হোক, পর্যালোচনা হোক। দ্বিতীয়ত আমার যদি স্ট্যান্টবাজি হত তবে আমি আমার লাইফটা রিস্কে ফেলতাম না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমি বাংলাদেশের একজন পক্ষশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের মাটি-মানুষকে ধারন করে এই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছি।যারা এ ধরনের কথা বলছেন তাদের আমি বলব আপনারা বাংলাশের মাটি-মানুষের কথা বলুন আর তাতেও যদি সন্দেহ থাকে তবে আসেন এইখানে মাত্র একদিন অবস্থান করুন তাহলেই আপনারা মনে-প্রাণে উপলব্ধি করতে পারবেন।


জাফর মুহাম্মদঃ  আপনি তো প্রায় একমাস অবস্থান কর্মসূচীতে আছেন আপনার পরবরতী কর্মসূচী কি হতে পারে সে ব্যপারে কিছু ভেবেছেন?

নাসির আব্দুল্লাহঃ দেখুন এটা তো একটা প্রতীকি অবস্থান আসলে এই প্রতীকি অবস্থান থেকে আমি শুরু করেছি কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে একটা  আজীবন ব্যাপী  অবস্থান নিয়েছি, এরপরে আমি সীমান্তবর্তী মানুষদের কাছে যাবো, বাংলাদেশের মানুষের কাছে যাবো যে আসলে এ ব্যপারটার প্রতিবাদ করা দরকার। আমি জনে জনে যতোজনের কাছে যাওয়া যায় আমি যাবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়-পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, সাংবাদিক, বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপ যারা এটা নিয়ে কথা বলছেন, একাডেমিক ওয়ার্ক করছেন আমি তাদের সকলের কাছেই যাবো।

জাফর মুহাম্মদঃ ধন্যবাদ আপনাকে।

নাসির আব্দুল্লাহঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

"বাঁধভাঙ্গা আওয়াজ আসুক রাগ কন্ঠে মোদের স্লোগান থাক"-  আরে ! দিল্লি না ঢাক, ঢাকা ঢাকা !

কোন মন্তব্য নেই