রাজনীতিতে 'ককটেল'


হ্যালো, টিএসসিতে বসে চায়ে চুমুক দিতেই খবর এলো ডাকসুর সামনে একটা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে! কয়েকদিন আগে মধুর ক্যান্টিনের সামনে একটা ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বোমা ফুটছে কিন্তু বোমাবাজরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে কেন? কে বা কারা এই ককটেল বোমার রাজনীতি করছে তা জানা যায় নি, কেউ সনাক্ত হয় নি, কিন্তু কেন? প্রশাসন কি কাজে ব্যস্ত? দুদিন পরই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হবে, এটা নিয়ে ব্যস্ততা থাকতেই পারে তবে নিয়মিত দায়িত্ব পালন বন্ধ করে কি সেটা করার কোনো যৌক্তিকতা আছে? ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকাটাই প্রক্টরের প্রধান দায়িত্ব। একটি ঘটনার স্বরূপ উন্মোচিত হতে না হতেই আরেকটি নাশকতার চেষ্টা! তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার আর দুটি বিস্ফোরণের ঘটনায় কেউ হতাহত হয় নি বলেই কি ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ নয়? 


ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল টিম আছে। ডাকসুতে সিসিটিভি আছে যা মধুর ক্যান্টিনের আশেপাশের কিছু অংশ কাভার করে। ক্যাম্পাসে ডজনখানেক গোয়েন্দাবাহিনী তৎপর আছে। প্রশাসন চাইলে এই শক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে সহজেই বোমাবাজদের সনাক্ত করতে পারে। এরপরও এরকম একটা সিরিয়াস বিষয়ে প্রশাসনের এমন উদাসিনতা কেন? প্রশাসন কি ডাকসুর হামলার ঘটনা থেকে ফোকাস সরাতে নতুন নাশকতা আমদানি করছে? নাকি প্রক্টর তার ব্যর্থতা ঢাকতে নিজেই ককটেলবাজদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়েছেন?

অতিসম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসুতে হামলার দায়ভার নুরুল হক নুরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের দায় এড়াতে এবং ব্যর্থতাকে আড়াল করতে বহিরাগত জুজু সামনে এনেছে। শুধু তাই নয় ডাকসুতে এতো বড় নৃশংসতার ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হামলাকরীদের নামে কোনো মামলা পর্যন্ত করে নি। অর্থাৎ ডাকসুতে হামলার ঘটনায় প্রক্টর ও উপাচার্য সরকারি এবং বেসরকারি বক্তব্যে যা প্রকাশ করেছেন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক! ককটেল বোমার বিস্ফোরণের সাথে প্রশাসনের কোন হাত নেই সেটা শতভাগ সত্য হলেও এ ব্যাপারে তাদের উদাসীন অবস্থানকে যে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। সংশয় থাকার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে এই ককটেল বোমার রাজনীতির কবলে পড়ে বহু মানুষের জীবননাশ হয়েছে। রাজনীতিতে ককটেল কেন লাগে? কোন রাজনীতিতে ককটেল লাগে? আমরা দেখেছি ২০১৪ সালে সারাদেশে ককটেল ও পেট্রোলবোমায় শতশত মানুষ মরেছে। আওয়ামীলীগ বলেছে, বিএনপি আন্দোলনের নামে পেট্রোল-ককটেল বোমা ছুড়ে নাশকতার রাজনীতি করছে, মানুষ হত্যার রাজনীতি করছে। বিএনপি বলেছে, আওয়ামীলীগই পেট্রোলবোমা ফাটিয়ে বিএনপির আন্দোলন নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। এই পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ভেতরেই বোমার আঘাতে সাধারণ মানুষই কিন্তু মরেছে। 


ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং ক্ষমতায় আসীন হবার দৌড়ে সফল হবার জন্য হত্যার কৌশল কারা করে? গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, পেট্রোলবোমা হামলা, ককটেল মারার ঘটনাগুলো ঘেঁটেঘুঁটে দেখলে দেখা যাবে জামাত-শিবির, বিএনপি ও আওয়ামীলীগের নামই আসবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এইসব দলের সদস্যরাই নাশকতার সাথে যুক্ত হয়, নাশকতা তৈরি করে। 
সম্প্রতি, আমরা দেখেছি, যশোরের বেনাপোল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ম্যাগজিন, গুলি, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। 


ভারতে চলমান উগ্র সাম্প্রদায়িক NRC ও CAA বিরোধী আন্দোলনেও এরকম একটা ঘটনা দেখা গেল। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ভারতজুড়ে প্রতিবাদের ঘটনায় কিছুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিক্ষোভকারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। মোদি বলেছিলেন, ‘পোশাক দেখেই বোঝা যায়, কারা হিংসা ছড়াচ্ছে।’ এই মন্তব্যের চাক্ষুষ প্রমাণ হাজির করতে মোদি সরকারের অনুসারীরা ‘টুপি আর লুঙ্গি পরে’ আন্দোলনকারী সেজে নাশকতার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ে। কিন্তু ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার সময় তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। টুপি আর লুঙ্গি পরে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগে ৬ বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। 


বাংলাদেশ-ভারত সবখানে বিরোধী মত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের এই নাশকতামূলক, বিদ্বেষপূর্ণ কূটকৌশলের রাজনীতি চালু রেখেছে জনবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী।


এবার আসি আগের প্রসঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো স্থানে ককটেল পেট্রোল গ্রেনেড যাই ফাটুক তা সর্বসাধারণের জন্য বা সমাজের জন্যই হুমকি ও নাশের আতঙ্ক কিংবা জীবনহানি ঘটাতে পারে। ক্যাম্পাসে বোমা ফাটলে শিক্ষার্থীদের চলাচলের এবং যাপনের স্বঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়। দেশে বোমা ফাটলে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এই নাশকতামূলক ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ কেউ রাজনীতি যে করে আজকের দিনে সেটা বিশ্ববাসীর কাছে পরিস্কার। ছাত্রসমাজের কাছে এবং দেশবাসীর কাছে একটাই বলার সেটা হচ্ছে প্রশাসন এবং সরকারের বা ক্ষমতা লিপ্সু লুটেরাদের কথায় বা গুজবে কান দিবেন না।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি আপনারা ডাকসুতে হামলাকারীদের নামে মামলা করুন, চিহ্নিত হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার করুন। ককটেল বিস্ফোরণকারীদের সনাক্ত করে আইনগত উদ্যোগ নিন। আর যদি নীবর থাকেন তাহলে আমরা স্পষ্ট করেই বুঝে নিবো আপনারাই নাশকতার হোতা। আর নাশকতা নৃশংসতাকারীদের আমরা প্রক্টর বা উপাচার্য হিসেবে সহ্য করবো না, বহাল রাখবো না।


কোন মন্তব্য নেই