কাদের মোল্লারা যেভাবে শহিদ হয়!


আপনি বলতে পারবেন আমি ধর্ষক, বলতে পারবেন,আমি হত্যাকারী। খুব বেহায়া ধরনের ক্রিমিনাল  না হলে পারবেন না, কিন্তু এদিকে শিবিরের ছেলেরা নিজেদের কাদের মোল্লা ঘোষণা দিয়ে বসে আছে। এটা তাদের কাছে জেহাদ। ফেসবুকে #weareQuadermolla দিয়ে পোস্ট করছেন অনেক শিবির ও জামায়াত কর্মী। 


"রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আনেন সেগুলো হলো,
 
  • ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
  • ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মিরপুরে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে তাদের নিজ বাসায় হত্যা করেন।
  • ২৯ মার্চ আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে অপহরণ করে নিয়ে যান এবং পাম্পহাউস জল্লাদখানায় জবাই করে হত্যা করেন।
  • ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা রাজাকার  বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।
  • ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মিরপুরের আলোকদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেন।
  • ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় গিয়ে লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করেন এবং তাতে লস্করের ১১ বছরের এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন। যেখানে কাদের মোল্লা নেতৃত্ব দেন।"

একটা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এতোগুলো বছর পরেও স্বাধীনতা বিরোধীদের মূল উৎপাটন করা যায়নি কেন? বব ডিলানের মতো বলাই যায়,
"প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা"
হুম,আসলেই তাই।ব্যপারটা একেবারে রাজনৈতিক। ক্ষমতায় আসার প্রয়োজনে বারবার জামায়াতে ইসলামীর ব্যবহার করা হয়েছে,রাজনৈতিক পূনর্বাসন করা হয়েছে। সময়ে-অসময়ে তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে এবং সর্বশেষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে শুধু জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা হয়েছে। আব্দুল কাদের মোল্লা'র 'আল বদর' থেকে শহিদ হবার যে যাত্রা তার রাহা খরচ জুগিয়েছে আমাদের ক্ষমতা কাঠামোই। সাম্য,সামাজিক ন্যায় বিচার,মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ হলেও পঞ্চাশ বছরেও এই উদ্দেশ্যগুলো পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে বারবার এধরনের শক্তি-সংঘ-গোষ্ঠি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে ভালো ভালো কথা বলে ক্লাস সিক্স থেকেই যে বাচ্চাদের জেহাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, ব্রেইন ওয়াশ করা হচ্ছে ভেবে দেখেছেন তারা ভবিষ্যতে কতোখানি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে! হাজারে হাজারে ছেলেমেয়ে নিভৃতে জেহাদি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে,মানসিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছে।আর অপেক্ষা করছে। ভাবছেন,রাষ্ট্র - সরকার এসব জানেনা!আমি বলব বরং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে এসব। কেন? শিবির কিংবা জামায়াত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে তাদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি করাটা বন্ধ হয়ে যাবে। শিবির কিংবা জামায়াত কোন সাধারণ সংগঠন নয়,এরা একটা চিন্তা যাকে কেবল চিন্তা এবং শিক্ষা দ্বারা মোকাবেলা করা সম্ভব।আওয়ামী সরকার কিংবা অন্যকোনো সরকারের আমলে মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে যে মিথ,বারবার ইতিহাস বদলানো,নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা দল বাদে বাকিদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র  সত্যিকার অর্থে এ প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে পারেনাই বরং সংশয় তৈরি করেছে আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে জামায়াতে ইসলাম কিংবা শিবিরের মতো সংগঠন গুলো। দমন-পীড়ন কিংবা শুধুমাত্র আইনের মাধ্যমে এদের প্রতিহত করা অসম্ভব।সময় থাকতেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠ ভাবে সংকলন করতে হবে,সকলকে জানতে হবে।শুধু নির্দিষ্ট কোন দলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনলেই হবে না বরং ঘরে-বাইরে, খোদ সরকারি দলে যারা আছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। 
সংবিধানের গণতান্ত্রিক রুপান্তর না হলে এবং জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে এ ধরনের সমস্যা গুলো হতেই থাকবে।কেউ ইসলামের নামে,কেউ দলের নামে কিংবা গোষ্ঠীর নামে এসব করতেই থাকবে। সমস্ত দক্ষিণ এশিয়া যখন সাম্প্রদায়িক জ্বরে ভুগছে, ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের উত্থান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন  ও গণহত্যা কি আমাদের যথেষ্ট সতর্ক করতে পারেনাই! লাখে লাখে কিশোর ভুল ভাবে ইসলামকে জানছে,ভেতরে ভেতরে সন্ত্রাসকে জেহাদ ভাবছে,খুনিকে শহিদ হিসেবে চিনছে এর দায় কার? গত পঞ্চাশ বছরে দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের সংখ্যা কমেনাই,বেড়েছে। গোলাম আযম,দেলোয়ার হোসেন সাঈদী,কাদের মোল্লা কে শহিদ ভাবা হচ্ছে।কেন এখনো ফেসবুকে গর্বভরে পোস্ট হয় আমি আব্দুল কাদের মোল্লা! বিস্ময় বাংলাদেশ বিস্ময়। আমার বাবা তো যুদ্ধের প্রজন্ম,তিনি প্রায়ই বলেন "জামায়তীরা হচ্ছে শিক্ষিত গোঁয়ার "। যারা শিবির করেন,তাদের বলব যুদ্ধের সময়কার মানুষের কাছে যান,শোনেন কি পরিস্থিতি ছিল সেসময়,আরোও পড়াশোনা করেন,ইতিহাস ঐতিহ্য জানেন।ধর্ম     নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেন, খারিজ করার মনোভাব থেকে বের হয়ে গবেষণা করেন। আমাদেরও এই খারিজ করার মনোভাব থেকে বের হয়েই চিন্তা করতে হবে। শিবির ট্যাগ লাগিয়ে মেরে ফেলা জায়েয করার রাজনীতি বুঝতে হবে। শিবির-জামায়াত-দৈনিক সংগ্রামের চিন্তাকে মোকাবেলা করতে গেলে এদের প্রতি ঘৃণা-সহিংসতা ছড়ানো,, ট্যাগদিয়ে হত্যাকে জায়েয করার যে রাজনীতি তাকেও মোকাবেলা করতে হবে।সেইসাথে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় সাম্য,সামাজীক ন্যায়বিচার,মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার 
লড়াই জারি রাখতে হবে।
লেখকঃজাফর মুহাম্মদ 
তথ্যসূত্রঃউউইকিপিডি, বিবিসি,অনলাইন

কোন মন্তব্য নেই