কারিগরি শিক্ষার ভ্রান্তির ফাঁদে দেশ!
দেশের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যেমন দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন, তেমনি বিদেশেও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করলে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছে প্রবাসী আয়। গত মে মাসে দেশের ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। তবে সব সংস্থাই একমত যে, ৭০ লাখ প্রবাসীর কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশই নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশিরা। এর কারণ হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে স্বল্পদক্ষ ৫২ শতাংশ, ৩১ শতাংশ দক্ষ, ১৪ শতাংশ আধা দক্ষ ও মাত্র ২ শতাংশ পেশাজীবী। এই পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় খুব সহজে বলা যায় তা হলো, এই স্বল্পদক্ষ বা আধা দক্ষ শ্রমিকদের যদি আমরা দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিদেশে পাঠাতে পারতাম, তবে এই রেমিট্যান্স আরও বেড়ে অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলত। পৃথিবীর অন্য দেশগুলো যেমন ভারত, শ্রীলংকা, চীন কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করেই জনশক্তি রপ্তানি করছে।
একটি কথা বলা হয়, আমরা অর্থনীতিতে ৪৬তম, কিন্তু কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ১১৪তম।
গত কয়েক বছরে বিভিন্ন মহলে প্রচার প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে অবহেলিত কারিগরি শিক্ষার জয়জয়কার। বিগত কয়েক বছরেই বাড়ানো হয় বিভাগগুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা। এই সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।পাঠদানও চলছে দুই শিফটে। কিন্তু নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। একই শিক্ষক পাঠদান করছেন দুই শিফটেই আবার পার্ট টাইম শিক্ষক দিয়েও কোনরকম কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়।
"২০১৬ সালে দেশে প্রায় আট হাজার কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। দেশের স্কুল-কলেজ -মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা মিলিয়ে যত শিক্ষার্থী আছে তার প্রায় ১৩ শতাংশ টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়েছে।"
বিবিসি অনলাইন
"কারিগরির বর্তমান শিক্ষার্থীর হার নিয়েই শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করা গেছে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান, আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাস্তবে কারিগরিতে শিক্ষার্থীর হার ৮.৪৪ শতাংশ।"
একটি কথা বলা হয়, আমরা অর্থনীতিতে ৪৬তম, কিন্তু কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ১১৪তম।
এডুকেশন বাংলা
নেই কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা কিংবা নুন্যতম উদ্যোগ।
"২০১৬ সালে দেশে প্রায় আট হাজার কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। দেশের স্কুল-কলেজ -মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা মিলিয়ে যত শিক্ষার্থী আছে তার প্রায় ১৩ শতাংশ টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়েছে।"
বিবিসি অনলাইন
"কারিগরির বর্তমান শিক্ষার্থীর হার নিয়েই শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করা গেছে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান, আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাস্তবে কারিগরিতে শিক্ষার্থীর হার ৮.৪৪ শতাংশ।"
কালেরকন্ঠ
এ ছিল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর হিসাব কিন্তু ভর্তি হওয়া সবাই কি শেষ পর্যন্ত এই অদ্ভুত উটের পিঠে বসে থাকতে পারেন?
কেসঃ ০১
২০১৬ সালে ঢাকা পলিটেকনিক ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ২য় শিফটের বি গ্রুপে ১ম পর্বে ভর্তি হয় ষাটজন শিক্ষার্থী ২য় এবং ৩য় পর্বে বেশকিছু শিক্ষার্থী বদলি হয়েও আসেন কিন্তু ২০১৯ সালে ঐ গ্রুপে ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২৫ জনে! আর বাকিরা? ঝরে গেছে প্রায় সবাই আর কেউ কেউ ইয়ার লসের ফাঁদে তারাও হয়তো ফিরবে কিংবা ফিরবে না!
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লকচেইন টেকনোলজিসহ আধুনিক বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম রয়ে গেছে সেই মান্ধাতার আমলে। কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম নিয়মিত আপডেট হয় না। যাঁরা কারিকুলাম নিয়ে কাজ করেন, তাঁরাও দক্ষ নন। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর সক্ষমতা তাঁদের নেই।
কালেরকন্ঠ
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা। দুই বছর আগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এই বিষয়টি চালু করলেও এখনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে যে শিক্ষকের এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁকেই পড়াতে হচ্ছে বিষয়টি। বোঝাই যায়, এ বিষয়ে যেসব শিক্ষার্থী পাস করে বের হবেন, তাঁরা কতখানি দক্ষ হবেন।
কালের কন্ঠ
বর্তমানে কারিগরিতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর কোনো উপযোগিতা নেই। যেমন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ‘ডিপ্লোমা ইন মাইনিং’। এটি মূলত খনিজ সম্পদ বিষয়ক একটি কোর্স। কিন্তু দেশে খনিজ সম্পদ বিষয়ক সরকারি-বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোও তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি চায় না। কারণ অনেক কোর্সেরই একটি বিষয় এটি। ফলে একটি স্বতন্ত্র ডিপ্লোমা কোর্স হিসেবে এর চাহিদা শূন্য। ফলে এ বিষয়ে ডিপ্লোমা করে চাকরি পাওয়া কষ্টকর। তার পরও কোর্সটি চালিয়ে যাচ্ছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
কালেরকন্ঠ
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো: শাহজাহান মিয়া বলেন, " আমাদের দেশে প্রতিবছর ২০ লক্ষ মানুষ চাকরীর বাজারে আসছে। কিন্তু টেকনিক্যাল খাতে লোকবলের চাহিদা কতটা সেটা আমরা এখনো নির্ণয় করতে পারি নাই।"
বিবিসি অনলাইন
দেশে সাধারণ সরকারি-বেসরকারি কলেজের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। অন্যদিকে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা মাত্র ৪৯। আর ৪৬১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও ভালো মানের রয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারি পলিটেকনিকে আসন শূন্য থাকে।
কালেরকন্ঠ
বিশ্বে প্রতিবছর কারিগরি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। বিশেষ করে লেদার, প্লাস্টিক, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস, পোশাক, অটোমোবাইল, এয়ারলাইনস, নার্সিংসহ বেশ কিছু বিষয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের চাকরিদাতারাও কারিগরিতে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক খুঁজে পাচ্ছে না। এ কারণে অনেক সময় বিদেশ থেকে দক্ষ লোক আনতে হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক খাতে বর্তমানে অনেক বিদেশি কাজ করছে। অথচ পোশাক খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এখনো প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা যায়নি।
কালের কন্ঠ
নেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ,নেই কর্মসংস্থানের নিশ্চয়, দক্ষ হতে আসা শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন পড়াশোনা নিয়ে ক্লাসও আর করা হয়না নিয়মিত। ব্যবহারিকের গুরুত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই বুঝলেও নেই দক্ষ প্রশিক্ষক কিংবা যন্ত্রপা।। যা আছে তাও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট। ফলে ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল জব শিট আর সেসনাল খাতায়ই সীমাবদ্ধ। কখনো কখনো উপস্থিতির উপরই নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তকের অবস্থাও শোচনীয় মানহীন কতগুলো গাইড প্রকাশনীর কাছেই যেন কারিগরি শিক্ষা জিম্মি হয়ে আছে। সমাধান কি?
সমাধান কল্পে যদিও আমরা একটা প্রস্তাবনা রাখতে পারি বটে কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা নিয়ে গবেষণা।
প্রস্তাবনা (খসড়া)
★পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমের সংস্কার সাধন এবং বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী করে আধুনিকায়ন।
★পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ।
★দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দান কর্মসূচী।
★ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর সময়কাল বৃদ্ধি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং নিয়ে ট্রেনিং সেন্টার গুলোর ব্যাবসা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহন।
★কর্মসংস্থানে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তী এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রয়োজনে বিদেশী চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি।
★উচ্চশিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি।
★বিভাগ অনুযায়ী কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান।
★ব্যবহারিক ক্লাস,যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষনের আধুনিকায়ন।
২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে তা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষা ও এর মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বিভিন্ন পেশায় বর্তমানে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। প্রায় দুই লাখ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ দেশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর আস্থাহীনতা। এই আস্থাহীনতা কীভাবে দূর করা যায়, বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপ, আফ্রিকাসহ যে দেশগুলোয় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা যেতে পারে, তা খুঁজে বের করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইন (ডওঘ) ও গ্যালাপ (এঅখখটচ) ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে আশাবাদের দেশ বাংলাদেশ। আশাবাদ গ্যালাপের সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ আশাবাদী দেশের তালিকায় প্রথম স্থানটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আশাবাদী হওয়ার মতো সবকিছুই আমাদের আছে, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে তা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষা ও এর মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বিভিন্ন পেশায় বর্তমানে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। প্রায় দুই লাখ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ দেশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর আস্থাহীনতা। এই আস্থাহীনতা কীভাবে দূর করা যায়, বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপ, আফ্রিকাসহ যে দেশগুলোয় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা যেতে পারে, তা খুঁজে বের করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইন (ডওঘ) ও গ্যালাপ (এঅখখটচ) ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে আশাবাদের দেশ বাংলাদেশ। আশাবাদ গ্যালাপের সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ আশাবাদী দেশের তালিকায় প্রথম স্থানটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আশাবাদী হওয়ার মতো সবকিছুই আমাদের আছে, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
Post a Comment