বব মার্লে-Babylon shall not rise again



রাস্তাফাইরাইয়ান রেগে সঙ্গীতে বহুল ব্যবহৃত শব্দ "ব্যাবিলন"। এই "ব্যাবিলন" দিয়ে কি ব্যাবলনীয় সভ্যতার কথা বলা হচ্ছে? না, এই ব্যাবিলন হচ্ছে উপনিবেশ। কয়েকশত বছরের উপনিবেশের ঘা শরীরে বহন করছে পৃথিবীর প্রান্তিক দেশগুলো। "প্রান্তিক", ইউরোপীয়দের অর্থে। সাদা সুপ্রিমেসি, ক্ষমতা এবং ইতিহাস সাদাদের দখলে থাকার ফলে পৃথিবীর সেন্টার দেখানো হয় ইউরোপকে এবং আমরা সহ পৃথিবীর তাবৎ মানুষ ইউরোপকেই দেখি। এই প্রান্তিক দেশগুলো আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া মহাদেশের। শারীরিক দাস প্রথার বিস্তৃতি ছিলো মূলত আফ্রিকা মহাদেশেই। সাদা সভ্যতা এবং জ্ঞানকাঠামোর তুলনায় আফ্রিকা সহ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মানুষ ছিলো তখনো দূরে তখনো ছিলো তারা প্রকৃতি মায়ের সন্তান। আমরা বর্তমান বিশ্বে যেমন দেখছি সাদাদের নির্মিত জ্ঞানকাঠামো পৃথিবীর ইতিহাস, মানুষ, জলবায়ুকে এক জঘন্য পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেমন আফ্রিকার সেই মাটির রঙের প্রকৃতির সন্তানদের অনেকেরই সাদাদের হাতে করুণ মৃত্যু। এইতো সেদিন বিশ শতকের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দশকের দাস হবার অভিজ্ঞতা শুনেছে "বব'" তার নানীর মুখে। জাহাজের ছোট্ট ডেক যেখানে মালপত্র রাখা হয় সেখানে মাথা নিচু করে গুটিশুটি মেরে বসে আছে প্রায় একশ জন আফ্রিকান প্রকৃতির সন্তান। এক শিঁকলে বাঁধা দুইজন করে। সাদাদের কাছে গাছ কাঁটা যেমন কালো রঙের এই দাশেরাও ছিলো তেমন। পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে গাছ কেঁটে ফেললে লাল রঙের রক্ত নামক তরল বের হয়না কিন্তু এই কালোচিপচিপে নারী-পুরুষ গুলোকে চাবুক দিয়ে পেটালে, তলোয়ার দিয়ে যখম করলে, গুলি করে হত্যা করলে লাল রঙের তরল পদার্থ বের হয়। পৃথিবীর প্রথম মানুষ যারা গাছ থেকে নেমে নতুন জীবন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো তারা পাথরে আঘাত পেয়ে বা নতুন নতুন নানা জিনিসের সাথে পরিচয় হতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলো, হাঁটু ছুলে গিয়েছিলো কিংবা কাঁটাযুক্ত কোন গাছে হাত দেয়ার ফলে লাল রঙের এই রক্ত নামক তরল বের হয়ে গড়িয়ে পরেছিলো কালো আঁশযুক্ত মাটিতে ঠিক তেমনি তরল তেমনি রক্ত কালো মানুষগুলোর থেকে ঝড়ে পড়তো। সেই জাহাজের নির্মম যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কেউ নিজের নখ দিয়ে গলা কেটে আত্মহত্যা করতো, কেউ কেউ শিকলে বাধা সঙ্গিকে নিয়ে ঝাপ দিতো সমুদ্রে যে সমুদ্রের হাজারো ফিট নিচে তার জনমের শেকড়। শেষ পর্যন্ত যারা টিকে যেতো তারা সাদাদের বড়সরো ইটপাথরের সমাজে দু'বেলা বাসি ব্রেডের বিপরীতে পেতো সারাদিন এবং রাতের কষ্টকর কাজের যন্ত্রনার যাপন।
সেই দাস ভর্তি জাহাজের স্মৃতির কথা নানীর কোলে শুয়ে যে শিশু রক্তরঙা চোখে মনোযোগ দিয়ে শুনতো তার নাম বব, বব মার্লে! রাস্তাফারাইয়ান রেগে শিল্পী, বিপ্লবী বব মার্লে। আপনাদের চোখে সাদারা যেই রোমান্টিক এবং কেবলমাত্র মারিজুয়ানা আসক্ত মার্লেকে দেখায় সেই মার্লে নয়। উপনিবেশের বিরুদ্ধে, সমতার পৃথিবী নির্মানে লড়াকু বিপ্লবী মার্লে। সকলের পৃথিবী এবং সমাজ নির্মাণে যৌথ লড়াইয়ে ডাক শুনি মার্লের গানে-

Stand up for your rights,
Don't give up the fight.

কালো, বাদামী, সাদা সহ পৃথিবীর নির্যাতিত, নিপীড়িত সকল জাতিসত্বাই নয়া উপনিবেশ কালে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলছে,

No people, No cry 
না মানুষ, আর কান্না নয়

Everything's gonna be alright. 
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

কঙ্গো থেকে মিসিসিপি নিশ্চয়ই মানুষ একদিন মুক্ত হবে।


কোন মন্তব্য নেই