গাঁজা ও গাজা বিত্তান্ত


আমরা প্রায়শই চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করি না, তুচ্ছ জ্ঞান করে এড়িয়ে চলি। এই সমস্যার দরুন অনেকের কাছে ‘গাঁজা‘ আর ‘গাজা‘ শব্দ দুটি একই মনে হয়। চন্দ্রবিন্দু সহ ‘গাঁজা‘ যা ‘গেট ওয়ে ড্রাগ‘ নামে পরিচিত অর্থাৎ নেশার হাতেখড়ি হয় যার মাধ্যমে। তবে এ বিষয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তার আগে আমরা চন্দ্রবিন্দু ছাড়া গাজা, যা ফিলিস্তিনের একটি বিতর্কিত ভুখন্ড সে সম্পর্কে জানবো। গাজার ২০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে চারটি শহর, আটটি ফিলিস্তিনি শরনার্থী শিবির আর এগারোটি গ্রাম। গাজা ভূখন্ডের পশ্চিমে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, তিন দিকে ইসরায়েল ও দক্ষিণ দিকে মিশরের সিনাই সীমান্ত।

গাজা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার। চিকিৎসার জন্য এখানকার লোকদের আগে মিশরে বা ইসরায়েলের ভেতর যাওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু তা এখন সীমান্তের কড়াকড়ির জন্য ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ঔষধ বা ডায়ালাইসিস মেশিনের মতো চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও এখন গাজায় আসা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তিনটি হাসপাতাল এবং ১০টি মেডিকেল সেন্টার তাদের সেবা স্থগিত করে দিয়েছে-বলছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

গাজার লোকেরা কিছু খাদ্য সহায়তা পায়, কিন্তু তা স্বত্তেও এখানে পাঁচ লক্ষের বেশি লোক মাঝারি থেকে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিন কাটাচ্ছে। আবাসনের ঘাটতিও প্রকট।

ইসরায়েলের ঘোষিত সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় একমাইলের বাফার জোনে ফিলিস্তিনিরা চাষাবাদ করতে পারে না।

সমুদ্রের তীর থেকে একটা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গাজার মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে পারে না।

গাজা একসময় মিশরের অধিকারে ছিলো। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল এলাকাটি দখলে নেয়। পরে ২০০৫ সালে ইসরায়েল এলাকাটির দখল ছেড়ে দেয়, সেখান থেকে চলে যায় ইসরায়েলি সৈন্যরা এবং প্রায় ৭ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারী। এই এলাকাটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে তবে ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হামাস গোষ্ঠী শাসন করে এই গাজা।

গাজার বাসিন্দাদের গড় আয়ও কমে গেছে। ১৯৯৪ সালে গাজার একজন অধিবাসীর গড় বার্ষিক আয় ছিল ২ হাজার ৬৫৯ ডলার। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট মতে সে আয় কমে নেমে এসেছে ১ হাজার ৮২৬ ডলারে। ২০১৭ সালের এক হিসেব অনুযায়ী গাজার ৪৪ শতাংশ লোকই বেকার। বিশেষ করে উদ্বেগের বিষয় হল যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬০ শতাংশেরও বেশি। গাজার দারিদ্র্যের হার ৩৯ শতাংশ- যা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের তুলনায় দ্বিগুন। 

এখন আসি চন্দ্রবিন্দু যোগে সেই গাঁজার নিকট

ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা, ডাল এবং ফুল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত। একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। এছাড়াও সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, পট ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

গাঁজার শারীরিক প্রভাব –

  • চোখ

  • লাল হওয়া

  • চাপ হ্রাস।

  • মুখ

  • শুষ্কতা।

  • ত্বক

  • গরম বা ঠান্ডা সঃবেদন।

  • হৃদপিন্ড

  • হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি।

  • পেশি

  • শিথিলকরণ।


যদি ধুমপানের মাধ্যমে গাঁজা সেবন করা হয় তবে তা ১ থেক ৩ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যদি গাঁজাকে খাদ্যের সঙ্গে বা পানিতে গুলিয়ে নেয়া হয় তবে এর প্রভাব ধীরে ধীরে সাধারণতঃ আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর শুরু হয় এবং তা ৪ ঘন্টার অধিক স্থায়ী থাকে।

মদ এবং ফেন্সিডিলের এর মতো পানিতে দ্রবণীয় কোন কোন মাদকদ্রব্য শরীর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায় কিন্তু গাঁজাতে বিদ্যমান THC এর অবশিষ্টাংশ মেদ-কোষে থেকেই যায় এবং এর প্রতিক্রিয়া শেষ না হতেই আরো গাঁজা সেবন করলে ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

গাঁজা সেবীদের স্মৃতিভ্রম প্রায়শই ঘটে, তারা একটি সৃজনশীল জটিল বাক্য শুরু করে কখনো শেষ করতে পারে না, অসংলগ্ন বা এলোমেলোভাবে তা শেষ হয়।

এই মাদকটি গ্রহণে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশী অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া, এমনও ঘটে থাকে, যে ব্যক্তি ২ মিলিগ্রাম ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুম না ধরলেও গাঁজা সেবনে তিনি ঘুমাতে বাধ্য।

তামাকের চেয়ে গাঁজা অধিক বিপদজনক কারণ গাঁজা সেবনের সময় সিগারেটের তুলনায় ফুসফুসে অন্তত তিন থেকে চারগুন বেশি কার্বন মনোঅক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ জমা হয়।

তবে কিছুদিন আগে ‘বিনোদনমূলক নেশার সামগ্রী‘ হিসেবে গাঁজা বৈধ করা হয়েছে কানাডায়, আরো অনেক দেশেই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা বিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই এক ধরনের গাঁজাসেবী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে যারা গাঁজা ব্যবহার করছেন যৌন আনন্দ বাড়ানোর জন্য। এ ধরনের লোকদের বলা হচ্ছে ‘ক্যানাসেক্সুয়াল‘-শব্দটা তৈরি হয়েছে গাঁজার ইংরেজি নাম ক্যনাবিসের প্রথম অংশ নিয়ে।

এর বিচিত্র সব পদ্ধতি অবলম্বন করছেন- যার মধ্য আছে শয়নকক্ষে গাঁজা মেশানো মোমবাতি জ্বালানো, বা মেয়েদের গোপন অঙ্গে গাঁজার তেল  ছিটিয়ে দেয়া।

সত্যিকথা বলতে কি, যৌন সুখে জন্য গাঁজার ব্যবহার বহু প্রাচীন। ভারতবর্ষে ঐতিহ্যশ্রয়ী হিন্দুদের অনেকে বিশ্বাস করেন গাঁজা থেকে তৈরি পানীয় যাকে বলা হয়  ভাঙ লাচ্ছি- তা পান করলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

প্রাচীন মিশরে মহিলারা তাদের যৌনাঙ্গে প্রয়োগ করতেন গাঁজা মেশানো মধু-যার উদ্দেশ্য ছিল তাদের ভাষায় জরায়ুকে ঠান্ডা করা।

কান্যাসেক্সুয়াল কথাটা প্রথম ব্যবহার করেন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাশলি ম্যান্টা। তিনি ২০১৩ সালে গাঁজা নামের যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন গাছের ওপর ভিত্তি করে নানা ধরনের সেক্স থেরাপি সেবা চালু করেছিলেন। তখনও গাঁজা যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রথম তোলা হয় উরুগুয়েতে, যুক্তরাজ্যে চিকিঠসার ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহাত বৈধ করার ব্যাপারটা পুনবিবেচনা করা হচ্ছে।

কিন্তু গাঁজার এ ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে কোনো জরিপ হয়নি, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও প্রমাণিত নয়। বরং কিছু জরিপে দেখা গেছে উল্টোটা। একটি জরিপে দেখা গেছে, পুরুষরা গাঁজা ব্যবহার করলে তাদের যৌনমিলনের সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আরেকটি জরিপ বলছে, যার প্রতিদিন গাঁজা খান তাদের যৌন সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

ব্রিটিশ যৌনস্বাস্থ্য এবং এইচআইভি সমিতির একজন কনসালট্যান্ট ড. মার্ক লটন বলেছেন, যৌনমিলনের অ্যালকোহল বা অন্য কোন ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে লোকদের সতর্ক হওয়া উচিত।


কোন মন্তব্য নেই